মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গণহত্যায় উস্কানিদাতা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৩৭ জনের সদস্যপদ স্থগিত আমাদের ঐক্য নষ্ট হলে পতিত স্বৈরাচাররা আবার ফিরে আসবে : কবি আব্দুল হাই শিকদার। কালের খবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৪০ : কালের খবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা। কালের খবর ফুলপুরে পৌর বিএনপির উদ্যোগে মতবিনিময়। কালের খবর রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে হাতের লেখা প্রতিযোগীতায় ১ম স্হান লালমনিরহাটের শিবরাম। কালের খবর এবার ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক সাদপন্থিদের। কালের খবর সাদপন্থিদের কাকরাইল মসজিদে বৃহৎ জামাতে জুমা আদায়। কালের খবর রায়পুরায় ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্্যালি। কালের খবর রায়পুরায় পৈত্রিক সম্পত্তিতে মাটি ভরাটে চাঁদা দাবি। কালের খবর
ডেমরার সারুলিয়া বাজারে ইজারাদার ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত রহমান সুজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ। কালের খবর

ডেমরার সারুলিয়া বাজারে ইজারাদার ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত রহমান সুজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ। কালের খবর

ডেমরা সারুলিয়া বাজারে ইজারার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ, ইনসেটে ইজারাদার ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আরাফাত রহমান সুজন-ছবি : কালের খবর।

এম আই ফারুক আহমেদ , কালের খবর, ঢাকা  :

রাজধানী ঢাকার পাশে ডেমরার সারুলিয়ায় ঐতিহ্যবাহী সারুলিয়া বাজার ইজারার নামে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে চাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন ইজারাদারের তোপের মুখে চাহিদা মিটিয়ে চাঁদা দিয়ে আসছেন তারা। এতে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী বাজারটির ব্যবসায়ীরা এই চাঁদাবাজদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ধার্য্যকৃত চাঁদা না দিলে ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধামকিসহ মারধরের অভিযোগও রয়েছে। তাদের অত্যাচারে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকান ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ইজারাদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্মারকলিপি দিলেও কোনো সুফল মিলছে না। এ নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বাজারের কয়েকশ ব্যবসায়ী।

সারুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সর্বশেষ থানা ডেমরার সারুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী বাজারটি কালের সাক্ষী হয়ে এখনো রয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে গড়ে ওঠা ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর এ বাজারটিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় দোকান রয়েছে। কাঁচাবাজার-ফলমূল থেকে শুরু করে ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র, মনোহরী, মাছ, মাংস সকল পণ্যের দোকান রয়েছে এখানে। সম্প্রতি বাজারটির ইজারা পান আলম মিয়ার ছেলে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আরাফাত রহমান সুজন নামের এক ব্যক্তি। তিনি ইজারা পাওয়ার পরপরই পাল্টে যেতে থাকে বাজারের ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের চিত্র। ইজারা পেয়েই ইজারাদার প্রতি দোকান থেকে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অগ্রিম উঠিয়ে নিয়েছেন। টাকা না দিতে চাইলেই দোকান ছেড়ে দিতে বলেন ইজারাদার ও তার লোকজন। এছাড়া প্রতি দোকান থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই ওই ব্যবসায়ীকে মারধরসহ দোকান করতে দেবে না বলেও হুমকি দেন ইজারাদার ও তার লোকজন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের পূর্বে প্রতি দোকান থেকে ইজারাবাবদ উত্তোলন করা হতো ১০ টাকা। ২০১৯ সালের করোনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান ইজারাদার তা বাড়িয়ে প্রতি দোকান থেকে ২০ টাকা করে আদায় শুরু করেন। ২০২০ সালে চাঁদা ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা ধার্য্য করা হয়। ২০২১ সাল থেকে প্রতি দোকান থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বাবদ ৩০ টাকা ও পানির জন্য ২০ টাকা যোগ হয়েছে। এই খাজনার টাকা প্রতিদিন উত্তোলন করছেন বিলকিস, জিয়া হোসেন, রাজু মিয়া এবং নুরু মিয়া নামের ব্যক্তিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারুলিয়া বাজারটি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বছরে আট লাখ টাকায় ইজারা দেয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২৬ লাখ টাকায় বাজারটির ইজারা পান সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমত আলী। পরবর্তিতে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা যাওয়ার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ বাজারের ইজারাদার পরিবর্তন হন। ২০১৯ সালে ৪০ লাখ টাকায় ও ২০২১ থেকে ২০২২ সালে ৫০ লাখ টাকায় ইজারা নেন আরাফাত রহমান সুজন। কিন্তু তিনি ইজারার নিয়ম-নীতি না মেনে এক প্রকার জোর-জুলুম করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইজারার নামে।

এই বাজারে সরকার চান্দিনা ভিটির জন্য ১৯৭৭ সাল থেকে ৬৮টি দোকান বরাদ্দ দেয়। তৎকালীন মালিকরা সরকারের নির্ধারিত পরিমাণ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে দোকান বরাদ্দ নেন। কিন্তু সরকারের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে গত পাঁচ মাস ধরে এসব দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে উত্তোলন করছেন ইজারাদার।

সারলিয়া বাজারের দোকানদার রবিউল ইসলাম কালের খবরকে জানান, ৫০০ দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে প্রতিদিন ৭৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এ হিসাবে মাসে ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ওঠে। এছাড়া পানি ও বিদ্যুৎ বাবদ ৫০ টাকা করে মোট ২৫ হাজার টাকা আদায় করে থাকেন ইজারাদার, যা মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি ঈদের পূর্বে বখশিস হিসেবে ২০০ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকা আদায় করেন ইজারাদার। এরা ইজারার নামে আমাদের কাছে চাঁদাবাজি করেন।

আব্দুর রহমান নামে এক আলু বিক্রেতা কালের খবরকে জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও প্রতিদিন চাঁদা গুনতে হচ্ছে। যদি কোনো কারণে টাকা দিতে না পারি বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও মারধরসহ অত্যাচার নেমে আসে আমাদের ওপর।

মনছুর আলী নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী কালের খবরকে জানান, ১০ টাকার ইজারা মাত্র কয়েক বছরে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। যা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় অনেক দোকানি ব্যবসা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

মুদিদোকান ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলাম কালের খবরকে জানান, আমরা সরকার থেকে চান্দিনা ভিটি বাবদ বছরে রাজস্ব দেওয়ার পরও কয়েক মাস ধরে জোরপূর্বক আমাদের দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে ইজারার নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আমরা ইজারাদার ও তার লোকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছি না। আল্লাহ ভালো জানেন তাদের কাছ থেকে কবে মুক্তি পাবো।

মাছ ব্যবসায়ী মুল্লুক চাঁন কালের খবরকে জানান, আমরা সারাদিন ব্যবসা কইরা চার-পাঁচশ টাহা কামাইতে পারি। এ থেকে দেড় থেকে দুইশ টাহা তাদের দিয়া দিতে হয়। বউ ছেলে পেলে লইয়া খুব কষ্ট কইরা দিন পাড় করতে আছি। দেহার কেহু নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সারুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আলম মিয়ার ছেলে ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আরাফাত রহমান সুজন, তার বড় ভাই সিডি সুমন ও সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ বাজার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। রাতে মাদক সেবন করে মাসুম বিল্লাহ ও তার লোকজন দোকানদারদের মারধর, গালিগালাজসহ বিভিন্ন রকম নির্যাতন করে থাকেন। তাদের ইচ্ছেমতো জোরপূর্বক ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ইজারার নামে মোটা অংকের টাকা আদায় করছেন তারা। তারা জানান, মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সুজন মিয়া পাঁচতলা বাড়ি, অর্ধকোটি টাকার গাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন।

বাজার কমিটির সভাপতি নবীর হোসেন কালের খবরকে জানান, আমরা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। সম্প্রতি ইজারাদার সুজন মিয়া ও তার লোকজন আমাদের চান্দিনা ভিটার দোকানদারদের কাছ থেকে অবৈধভাবে জোরপূর্বক প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। থানা পুলিশকে জানিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। যে কয়দিন ব্যবসা করবো তাদেরকে চাঁদা দিয়েই করতে হবে।

ইজারার নামে অতিরিক্ত টাকা ওঠানোর বিষয়ে আরাফাত রহমান সুজন মিয়া কালের খবরকে জানান, আমি ইজারা নিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমি অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নই। চান্দিনা ভিটি থেকে কীভাবে টাকা আদায় করছেন জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই সকল দোকানদারেরা চান্দিনা ভিটির কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। কাগজ দেখাতে পারলে তাদের কাছ থেকে আর ভাড়া নেওয়া হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান পলিন কালের খবরকে জানান, সারুলিয়া বাজারের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ বিতর্ক রয়েছে। ইজারার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলে বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ কালের খবরকে জনান, আমরা সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম-নীতি মেনেই সারুলিয়া বাজারটির ইজারা প্রদান করেছি। ইজারাদার শর্ত ভঙ্গ করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে তার ইজারা বাতিল করা হবে।
পুলিশের ওয়ারী জোনের ডেপুটি কমিশনার ইফতেখার ইসলাম কালের খবরকে জানান, ইজারার নামে ইজারাদার যদি অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com